Need Help, Talk to Expert : 01771-661143

Working Hours : Monday to Friday (9am - 5pm)

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় বাস করেন শেলি (স্থপতি গ্রাহকের প্রকৃত নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক)। স্বামী–সন্তান নিয়ে তিনি থাকেন শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুর অনেক আগেই মারা গেছেন। সম্প্রতি শাশুড়িও গত হয়েছেন। শাশুড়ি যতকাল ছিলেন, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী বাসার কোনো কিছু বদল করেননি। সাবেকি ধাঁচের সঙ্গেই মানিয়ে নিয়েছেন। শাশুড়ির মৃত্যুর পর বাসাটাকে এখন নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন শেলি। কাজটি করছে স্টুডিও মেটামরফোসিসের পরামর্শক স্থপতি সাইকা ইকবাল ও তাঁর দল।

একটা পুরোনো ফ্ল্যাট নতুন করে সাজানোর ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেন, প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘পুরোনো ফ্ল্যাটে আলো ঢোকার ব্যবস্থা কম থাকতে পারে। ঘরগুলো ছোট হতে পারে। মালিক হয়তো চাইছেন ড্রয়িং ও ডাইনিংরুমটা মিলিয়ে দিতে। অথবা রান্নাঘরের সঙ্গে ডাইনিংটা জুড়ে দিতে। সে ক্ষেত্রে আমরা পার্টিশন ওয়াল ভেঙে ফেলি। আলো ঢোকার জন্য জানালার ব্যবস্থা করি বা এক পাশ ভেঙে গ্লাস লাগিয়ে দিই। পুরোনো ফ্ল্যাট নতুন করার ক্ষেত্রে আলো–বাতাস নিশ্চিত করা, ঘরগুলো যাতে ছোট মনে না হয়, প্রতি ইঞ্চি জায়গা কাজের উপযোগী হয়, সর্বোপরি দেখতে ভালো লাগে—এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিই। টাইলস বদলে ফেলা, নতুন করে রং করা—এগুলো তো আছেই। প্রয়োজন বুঝে এসি যোগ হতে পারে। প্রয়োজন বুঝে লো কমোড ভেঙে হাই কমোড করা যেতে পারে।’

কেউ পুরোনো ফ্ল্যাট নতুন করে সাজাতে চাইবেন কেন? এর উত্তরে স্থপতি সাইকা একাধিক কারণের কথা জানান। প্রথমত, পুরোনো ফ্ল্যাটটি চলতি ধারার সঙ্গে বেমানান হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেকি চেহারা বদলে আধুনিকীকরণের দিকে নজর দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, পুরোনো বাসায় খোলামেলা পরিবেশ কম থাকতে পারে। হয়তো এক পাশ খোলা ছিল। সেখানে একটি নতুন ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। তখন বাড়ির যে পাশটা খোলা, সেখানে একটা বড় জানালা, বারান্দা বা টেরেসের ব্যবস্থা করে ঘরে প্রাকৃতিক আলো–বাতাস ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া পরিবারে নতুন সদস্য এলে, যেমন বউ বা সন্তান, তাদের প্রয়োজন অনুসারে নতুন করে বাসা সাজানোর প্রয়োজন হয় অনেক সময়।

প্রায়ই আমরা একই ঘর, একই ফ্রেম, একই ছকে বাঁধা জীবন যাপন করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি। তখন আমরা সবকিছু আবার নতুন করে সাজিয়ে একটা নতুন যাত্রার তাড়না বোধ করি। পুরোনো ফ্ল্যাট নতুন করে সাজানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিটি জায়গার সঠিক ও যুগোপযোগী ব্যবহার। এ জন্য প্রথমেই ফ্ল্যাটের ভেতরের অনাকাঙ্ক্ষিত দেয়াল অপসারণ করতে হবে। এরপর আসে ফ্লোর ফিনিশিং। বাজারে মূল্যভেদে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন প্রকার সিরামিক, মার্বেল, গ্রানাইটসহ নানা রকম ফ্লোর টাইলস পাওয়া যায়। নিজস্ব রুচি, শখ, শৌখিনতা আর আর্থিক সংগতির সঙ্গে স্থায়িত্ব ও পরিবেশ উপযোগিতার সমন্বয় ঘটিয়ে বদলে ফেলা হয় তা। পুরোনো ফ্ল্যাটের মেকওভারে অন্দরের রং খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভেতরের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে রঙের ওপর। পুরোনো ফ্ল্যাট নতুন সাজে সজ্জিত হওয়ার আরেক গুরুত্বপূর্ণ অলংকার আসবাব। অনেকেই বাড়িতে অ্যান্টিক ফার্নিচার পছন্দ করেন। আবার অনেকেই হাত বাড়ান আধুনিক ফার্নিচারের দিকে।

স্থপতি সাইফুর রহমান বলেন, ‘শুরুতেই ফ্ল্যাটের কনটেক্সট দেখে নিতে হবে। কলাম ও বিম ছাড়া সবকিছুই বদলানো সম্ভব। বাসার যে পাশে জলাভূমি বা সুন্দর ভিউ, সেদিকটা খুলে দিতে হবে। কেননা জলাভূমির দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের মন শান্ত হয়। এ ছাড়া এভাবে বাইরের পরিবেশকে ভেতরে আমন্ত্রণ জানানো যায়। ফলে ঘরের জায়গা কম থাকলেও সেটাকে কম বলে মনে হয় না।’

এই স্থপতির পরামর্শ, সাবেকি আমলে বারান্দাটি হয়তো ইট দিয়ে আটকে রাখা ছিল। সেটি খুলে জালি দেওয়া যেতে পারে। তাতে প্রাইভেসিও থাকল আবার আলো–বাতাসও আটকাল না। যখন প্রয়োজন, তখন তুলেও রাখা যেতে পারে জালি। এ ছাড়া ঘরের বিভিন্ন আসবাব ও উপাদানের ফ্রেমের ভেতর সমন্বয় থাকাটাও জরুরি। ফ্রেম থেকে ফ্রেমে বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে। নতুন ও পুরোনো ছবি বাঁধাই করে টাঙিয়ে রাখতে পারেন দেয়ালে। অন্দরে বিভিন্ন গাছের সমাবেশ আপনাকে দেবে প্রশান্তি।

সম্প্রতি নিজের পুরোনো বাসাটিকেই নতুন করে সাজিয়েছেন রন্ধনশিল্পী দিল আফরোজ। অনেকেই মনে করেন, বাসা নতুন করে সাজানো অনেক খরচের ব্যাপার। কিন্তু সেটি যে কম খরচেও করা সম্ভব, তা–ই করে দেখিয়েছেন দিল আফরোজ। পুরোনো উপাদানগুলোতেই নতুন করে, অন্যভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। এই যেমন আগে যে পর্দাগুলো ছিল, সে কাপড়গুলোই নতুন করে জুড়ে রঙের সমন্বয়ে বদলে দিয়েছেন। দরজিকে বাসায় ডেকে এনে কাগজে নকশা এঁকে বুঝিয়েছেন। ফলে দরজির খরচ ছাড়া পর্দায় আর বিশেষ কোনো খরচ হয়নি।

পুরোনো রান্নাঘর সরিয়ে ওপেন কিচেন করেছেন দিল আফরোজ। কেন? একটা জিনিস কিনে এনে প্যাকেটসমেত আলমারিতে তুলে রাখলে অনেক সময় সেটি আর ব্যবহৃতই হয় না। চোখের আড়াল তো মনের আড়াল। সবকিছু সামনে থাকলে উপাদানগুলো খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। ব্যবহৃতও হয় বেশি। কাজ করতে সুবিধা হয়।

ওপেন কিচেনের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ডাইনিংরুম। আর সেখানে রাখা টেলিভিশন। যাতে টিভি দেখতে দেখতে রান্না করতে পারেন। চা–গাছের শিকড়, কাঠের গুঁড়ি, পুরোনো ভাঙা আসবাব বা বাটি—এ রকম জিনিসগুলোও সংগ্রহে রাখেন। সুযোগমতো শোপিস বানিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া অনলাইনে রান্নার ক্লাস নেওয়া, নানা রকম ভিডিও বানানোর সময় এগুলো কাজে লাগে।

কেবল বাচ্চাদের পড়া আর খেলার জন্য একটা ঘর রেখেছেন দিল। এক পাশে পড়ার টেবিল, চেয়ার, বই–খাতা, রংপেনসিল; আরেক পাশে খেলার উপকরণ। সেই ঘরে কোনো বিছানা নেই। নিজের বেডরুমেও বিছানা ছাড়া আর বিশেষ কিছু রাখেননি। বেডরুমটা যাতে ঘুমানো ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্যই এ ব্যবস্থা।

নিজের বাসাটিকে নতুন করে সাজানো নিয়ে দিল আফরোজ বলেন, ‘চাইলেই কাজটা কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করাতে পারতাম। তাতে আমার সময়, শ্রম খুবই কম ব্যয় হতো। কিন্তু কিসে আমার সুবিধা, এ রকম ছোট ছোট ডিটেইল তো আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। এ ছাড়া আমার পড়াশোনাও এ বিষয়ে। একটা উপাদানকে কাছাকাছি অন্য একটা শিল্পে প্রাণ দিয়ে নতুন সৃষ্টিতে এর উপযোগিতা তৈরি করাতেই আমার আনন্দ। আমি সেটা উপভোগ করি।’

পুরোনো ফ্ল্যাট বা বাসাকে নতুন করে নেওয়ার আগে কী কী চাই, তার একটা তালিকা থাকা জরুরি। এতে বাসা নতুন করে গড়ার সময় কিছু বাদ পড়বে না।

Leave a Reply

Go To Top